প্রত্যয় পত্র কি| প্রত্যয় পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার| প্রত্যয় পত্রের সুবিধা গুলো কি কি।
প্রিয় পাঠক ,আজকের এই পোস্ট জুড়ে যে বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করবো সেগুলো হল প্রত্যয়ন পত্র কি? প্রত্যয়ন পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার প্রত্যয়নপত্রের সুবিধা গুলো কি কি এ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।
আপনি যদি না জেনে থাকেন তাহলে আজকের এই আর্টিকেলটি আপনার জন্য অনেক উপকারে আসবে। আর যদি আপনি জেনে থাকেন তাহলে এই আর্টিকেল আপনার জন্য নয়।
পোস্ট সূচীপত্র-প্রত্যয়ন পত্র কি? প্রত্যয়ন পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার ।প্রত্যয়ন পত্রের সুবিধা গুলো কি কি।
- ভূমিকা
- প্রত্যয় পত্র কি
- প্রত্যয় পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার
- প্রত্যয়নপত্রের সুবিধা গুলো কি কি
- প্রত্যয় পত্রের প্রকারভেদ
- প্রত্যয় পত্রের বৈশিষ্ট্য
- লেখকের মন্তব্য
ভূমিকা
আমাদের দৈনন্দিন জীবনে প্রত্যয়ন পত্রের গুরুত্ব অনেক বেশি। প্রত্যয়ন পত্র কি
?প্রত্যয়ন পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার ,প্রত্যয়ন পত্রের সুবিধা গুলো কি কি ?এই
সম্পর্কে এই পোস্টটিতে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। সেই সাথে আরো আলোচনা করা হবে
,প্রত্যয়ন পত্র কি কি কাজে লাগে ,প্রত্যয়ন পত্র কোথায় পাওয়া যাই সেই
বিষয়ে ।তাহলে চলুন জেনে নেয়া যাক ,এই সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য আজকের এই পোস্ট
থেকে।
প্রত্যয় পত্র কি
প্রত্যয় পত্র হলো আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের একটি অত্যাবশ্যকীয় দলিল। আবার অন্যভাবে বলা যায় যে, প্রত্যয়নপত্র হল ব্যাংক কর্তৃক জারিকৃত এক প্রকার ঋণের দলিল। এরুপ পত্র ছাড়া রপ্তানিকারক আমদানিকারকের নিকট পণ্য রপ্তানি করতে পারে না। কাজেই যে পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক আমদানি কারকের পক্ষে এবং রপ্তানিকারকের অনুকূলে আমদানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা প্রদান করে তাকে প্রত্যয়ন পত্র বলে।
যে পত্রের মাধ্যমে ব্যাংক আমদানিকারকের পক্ষে রপ্তানিকারককে রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য পরিশোধের নিশ্চয়তা দেয় এবং আমদানিকারকের অপারগতাই নিজে পরিশোধ করবে বলে প্রতিশ্রুতি দেয় তাকে প্রত্যয়ন পত্র বলে।
প্রত্যয় পত্র বলতে এমন এক ধরনের পত্র কে বোঝায় যার মাধ্যমে কোন ব্যাংকার অন্য
ব্যাংকারকে এ মর্মে অনুমতি প্রদান করে যে নির্দিষ্ট শর্ত প্রতিপালিত হলে
পত্রে উল্লেখ নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ প্রদান করা হোক
।বাণিজ্যিকভাবে প্রত্যয় পত্র আন্তর্জাতিক আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের দেনা পাওনা
নিষ্পত্তির উপায় হিসেবে ব্যাপকভাবে ব্যবহার করা হয় ।
প্রত্যয় পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার
আধুনিক যুগের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে প্রত্যয় পত্রের গুরুত্ব ও ব্যবহার অনেক।
আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্যের অর্থসংস্থানের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ
ভূমিকা পালন করে। প্রত্যয় পত্রের মাধ্যমে আমদানি কারক বিদেশের অপরিচিত
ব্যবসায়ীর নিকট হতে পণ্য আমদানি করতে পারে। প্রত্যয় পত্রের দ্বারা ব্যাংক
আমদানি কারকের পক্ষ হতে বিদেশের রপ্তানি কারকে এ মর্মে আশ্বাস প্রদান করে যে ,
পত্রে উল্লেখিত শর্ত মোতাবেক উক্ত ব্যাংকের ওপর ইসুকিত সকল বিলের মর্যাদা দেয়া
হবে।
এতে অপরিচিত আমদানিকারক ও রপ্তানিকারকের মধ্যে ধারে পণ্য ক্রয়-বিক্রয়ের পথ সুগম হয় এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারিত হয় ।রপ্তানিকারক পণ্য আমদানিকারকের নিকট পাঠাবার পূর্বেই প্রত্যয় পত্র দাবি করে ।আমদানি কারক তার ব্যাংকের নিকট হতে প্রত্যয় পত্র সংগ্রহ করে তা রপ্তানি কারককে পাঠায় ।কোন রপ্তানিকারকের অনুকূলে একবার প্রত্যয় পত্র খোলা হলে তার বিনা অনুমতিতে তা বাতিল করা যায় না ।
রপ্তানিকারক আমদানি কারকের নিকট হতে প্রত্যয়-পত্র পেয়ে পণ্যের ফরমায়েশ অনুযায়ী আমদানি কারকের নিকট পণ্য প্রেরণ করে ।প্রত্যয় পত্র কিরূপে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যকে সাহায্য করে তা একটি উদাহরণের সাহায্যে আপনাকে বোঝানো হল। ধরা যাক, বাংলাদেশের ক ,জাপানের খ, নিকট হতে ৫০ হাজার টাকা মূল্যের যন্ত্রপাতি ও কল কব্জা আমদানি করতে মনস্থ করেছে । এক্ষেত্রে বাংলাদেশের আমদানিক কারক ক কে তার ব্যাংকের নিকট হতে এটি জাপানের খ এর অনুকূলে একটি প্রত্যয় পত্র ইস্যু করে তা খ এর নিকট পাঠাতে হবে। খ উক্ত প্রত্যয় পত্র পেয়ে খ এর ফরমায়েশ মোতাবেক ক কে মাল পাঠাবে।
অতঃপর খ এ মালের জাহাজী দলিল সমূহ ক এর ব্যাংকের নামে পাঠিয়ে দেবে। এ দলিল গুলো
ছাড়া ক বন্দর হতে মাল খালাস করতে পারবে না। সুতরাং আমদানি কারক ক মালের মূল্য
ব্যাংক কে পরিশোধ করে জাহাজী দলিলগুলো সংগ্রহ করে এবং বন্দর কর্তৃপক্ষকে তা
দেখিয়ে পরে বন্দর হতে মাল খালাস করে নিবে। পরে আমদানি কারকের ব্যাংক
তার প্রতিনিধির মাধ্যমে রপ্তানি কারককে উক্ত টাকা পরিশোধ করবে। এভাবে আপনি
প্রত্যয় পত্রের মারফত আমদানি কারক অপরিচিত রপ্তানিকারকের নিকট হতে পণ্য
ক্রয় করতে পারেন।
প্রত্যয় পত্রের সুবিধা গুলো কি কি
নিচে প্রত্যয় পত্রের সুবিধা গুলো তুলে ধরা হলো।
- এটি আমদানি কারকের পক্ষে রপ্তানি কারকের অনুকূলে আস্থা সৃষ্টি করে। ফলে আমদানি কারক সহজেই বিদেশ হতে পণ্য আমদানি করতে পারে।
- এটি রপ্তানিকারকের রপ্তানি মূল্য আদায়ের নিশ্চয়তা বিধান করে।
- এটি আমদানি রপ্তানি ব্যবসা সম্প্রসারণ এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে
- এটি হস্তান্তরযোগ্য না হয় নিরাপদ ও নির্ভরযোগ্য ঋণের দলিল হিসেবে বিবেচিত। কাজেই এটি হারিয়ে গেল ওকারো তেমন ক্ষতি হয় না।
- এটি বিভিন্ন দেশের ক্রেতা বিক্রেতাদের মধ্যে পণ্যদ্রব্য ক্রয় বিক্রয় সম্ভব করে।
- এটি ইসুর মাধ্যমে ব্যাংকের আয় ও সুনাম বৃদ্ধি পায়।
- এটি আমদানি কারক রপ্তানিকারক ও ব্যাংকের মধ্যে ব্যবসায়িক সম্পর্কের সেতুবন্ধনে সাহায্য করে।
- এটি আন্তর্জাতিক দেনা পাওনা নিষ্পত্তির ব্যাপারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
- এটি দেশভ্রবণ ও পর্যটনে বিশেষভাবে সাহায্য করে।
প্রত্যয় পত্রের প্রকারভেদ
বর্তমান যুগে প্রত্যয় পত্র ছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যের কল্পনায় করা যায় না। এক দেশের ব্যবসায়ীর সাথে আরেক দেশের ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত পরিচয় থাকে না। কাজেই কোন ব্যবসায়ী বিদেশী ক্রেতার নিকট ধারে মাল বিক্রি করার সময় ক্রেতার আর্থিক সচ্ছলতা ওবিশ্বস্ততার সনদ চাইবে ,তাতে অবাক হওয়ার কিছুই নেই। এ কারণে আমদানি কারকের অনুকূলে ব্যাংক বিশ্বস্ততার প্রমাণ হিসাবে প্রত্যয় পত্র প্রেরণ করে। ব্যবসায়িক জগতে যে সকল প্রত্যয় পত্রের ব্যবহার দেখা যায় সেগুলো সংক্ষিপ্ত বর্ণনা নিচে আমি আপনাদের দেখানোর চেষ্টা করব। এখানে মোট বারোটি প্রত্যয় পত্র এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
- দলিল বিহীন প্রত্যয় পত্র
- দলিল সংবলিত প্রত্যয় পত্র
- নিশ্চিত প্রত্যয় পত্র
- অনিশ্চিত প্রত্যয় পত্র
- ঘূর্ণায়মান প্রত্যয় পত্র
- নির্দিষ্ট বা স্থায়ী প্রত্যয় পত্র
- স্থির প্রত্যয় পত্র
- খোলা প্রত্যয় পত্র
- প্রান্তিক প্রত্যয় পত্র
- অগ্রিম প্রত্যয় পত্র
- ভ্রাম্যমান প্রত্যয় পত্র
- ব্যাক টু ব্যাক প্রত্যয় পত্র
প্রত্যয় পত্রের বৈশিষ্ট্য
প্রত্যয় পত্রের কতগুলো বৈশিষ্ট্য দেখানো হলো-
ব্যাংক কর্তৃক ইস্যুকৃতঃ এটি বাণিজ্যিক ব্যাংক বা বৈদেশিক বিনিময় ব্যাংক ইস্যু করে।
পক্ষ সমূহ-প্রত্যয় পত্রের পক্ষ তিনটি। যথা-১। আমদানি কার.২। রপ্তানিকার.৩। ব্যাংক।
বিল মর্যাদার প্রতিশ্রুতিঃ এর মাধ্যমে নির্দিষ্ট অংকের বিলে স্বীকৃতি প্রদান ও মেয়াদান্তে পরিশোধের প্রতিশ্রুতি প্রদান করে ।
বিলের সময়ঃ প্রত্যয় পত্রে বর্ধিত সময়ের মধ্যে বিলটি আদিষ্ট ব্যাংকের নিকট স্বীকৃতির জন্য ও পরিশোধ জন্য উপস্থাপিত হতে হবে।
অর্থের পরিমাণ -এতে রপ্তানি কারক এর বিল কি পরিমাণ অর্থের হবে তার উল্লেখ থাকে।
তারিখ -প্রত্যয় পত্রের ইসুর তারিখ উল্লেখ থাকে।
অ হস্তান্তর যোগ্যতা -এটি হস্তান্তরযোগ্য নয়।
নিরাপত্তা -হস্তান্তরযোগ্য নয় বলে অধিক নিরাপদ।
সম্মোধন -রপ্তানি কারকের অনুকূলে ইস্যু করা হয় বিধায় এতে রপ্তানি কারকে সম্বোধন করা হয়।
স্বাক্ষর -ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা কর্তৃক প্রত্যয় পত্র অবশ্যই স্বাক্ষরিত হতে হয়।
লেখকের মন্তব্য
এই পোস্টটি পড়ে আপনার সামান্যতম উপকার হলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। আপনার যদি
কোন পরামর্শ থেকে থাকে তাহলে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাতে ভুলবেন না। আজকের এই
পোস্টটি এখানেই শেষ করছি ভালো থাকবেন ,সুস্থ থাকবেন ,খোদা হাফেজ।
এই ওয়েবসাইটের নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url